জিরো বাউন্ডারি কবিতার চতুর্থ সংখ্যার জন্য লেখা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট মার্চ মাসের ১০ তারিখ। দুটো কবিতা বা কবিতা বিষয়ক লেখা নিজের এক কপি ছবি সমেত পাঠিয়ে দিন আমাদের ইমেলে-0boundarykabita17@gmail.com

অনুপ বৈরাগী

অরগ্যানিক গ্যাস


হেডিং দেখে ভাববেন না আমি কোন কেমিক্যাল অ্যানালাইজার বা আমার কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জ্ঞানের গভীরতা আছে অথবা কেমিক্যাল কম্পোজিশন নিয়ে বোরিং লেকচার দিতে কোমর বাঁধছি। আসলে আপনার মতো কালিদাস বিদ্যালয় বা কাশীশ্বরী বালিকা বিদ্যালয়ের সমতুল শিবদাস আচার্যি মশায়ের নামাঙ্কিত বিদ্যালয়ের জ্ঞান ই আমার শিবরাত্তিরের সলতে। তবে কেমিস্ট্রিতে কেমিক্যাল কম মিস্ট্রিটাই যে একটু বেশি পরিমাণে আছে সেটা পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে যখন তাকাতে শিখলাম তখন বোন টু বোন মানে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম । 


সকাল থেকে আনন্দমোহন বাবুর মুখ অষ্টবক্র। কপালে সাড়ে পাঁচটা ভাঁজ। কারনটা আন্দাজ করে ফোড়ন কাটতে শুরু করেছেন ওনার অর্ধাঙ্গীনী শান্তিদেবী " কি ! আজকেও পরিষ্কার হলো না ! যতই তুমি কবিরাজি ওষুধ খাও । মেরে কেটে পঁচিশ গ্রাম আর গুরু গুরু বাজ সঘন সঘন। কথায় আছে না ..যে যতো গর্জায় ততো বর্ষায় না" সকাল সকাল আনন্দমোহন বাবুর আ কেটে নিরা কে বসিয়ে তাঁর গিন্নী যে মোহন বাঁশি বাজাতে শুরু করেছেন তাতেই যেন বারুদে ফস করে জলন্ত  দেশলাই কাঠি ছুঁড়ে দিলো। "বুঝবে না গিন্নী বুঝবে না । যার হয় সে বোঝে। রাতে ঘুম নেই । পেট ফুলে জয়ঢাক। মাথা ঘুরছে। বুকের ব্যাথা বেড়েছে। আর তুমি মশকরা করছো। বলি একটু তো সহানুভূতি দাবি করতেই পারি নাকি। গোবর গ্যাস হচ্ছে তা আমাদের টা বা বাদ যায় কেন ? জৈব গ্যাসের পুল তো বাড়ে ! দিন দিন যা দাম বাড়ছে। ভর্তুকির নামে যা চলছে ! সব কিছুর মুলে এই গ্যাস ।" বিরক্তিসূচক আওয়াজ করতে করতে আনন্দ মোহন বাবু সকালে তৃতীয়বারের টয়লেট অধিবেশনে ঢুকলেন আর প্রবল বিক্রমে শব্দবাজি শুরু করলেন বন্ধ দরজার ওপারে।


আপামর বাঙালীর বদ্ধমূল ধারনা শারীরিক মানসিক সব যন্ত্রণার কারণ এই অরগ্যানিক গ্যাস। সমস্ত রোগের একটাই কারণ । কোন রোগের কারণ হিসেবে ডাক্তার বাবু যদি একটু গম্ভীর মুখে বারকয়েক মাথা দুলিয়ে বলেন " বুঝলেন মশাই গ্যাস ! ওর থেকেই হার্ট দূর্বল হয়ে যাচ্ছে ।" এতো সমস্যার মধ্যেও দেখবেন রোগীর বাড়ির লোক আকর্ণ হেসে বলছেন " ঠিক ধরেছেন ডাক্তার বাবু। আমিও তাই ভাবছিলাম । আগের ডাক্তার বাবু তো দুর দুর করে তাড়িয়ে দিলেন। আমাদের পাশের বাড়ির জ্যাঠামশাই গ্যাসের জন্যই তো সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়ে মরে গেলো। আর রাঙাপিসি তো সেবার খাওয়ার পর এতো গ্যাস হলো যে হার্ট অ্যাটাক।"........ফিরিস্তি থামতে চায় না। নিজের রোগের উপসর্গ বলার পর " ....আর ডাক্তার বাবু আমার ভীষণ গ্যাস হয় বা গ্যাসের ওষুধটাও দেবেন" টাইপের স্টিরিওটাইপ লাইন না বললে সংলাপ ঠিক জমে না। সব কথা যেন বলা হলো না ! বাসে ট্রামে নিমেশে গ্যাস উধাও করার বড়ি দেদার বিকোচ্ছে। পেট্রোল ডিজেল থেকে অরগ্যানিক সব ক্ষেত্রেই বেশ জমাট ব্যবসা । দেদার লাভ ।


আনন্দমোহন বেরোতেই শান্তিদেবী শুরু করলেন " আজ ডাঃ অনুরাগের কাছে যেতে হবে"। 
"কেন? আর এই অনুরাগ ডাক্তারের প্রতি অনুরক্ত হওয়ার কারণ !"
"কারণটা না বোঝার মতো কচি বয়স তোমার আছে কি?"
"এই তুমি না ! বিয়ের সময় ভাবলাম নামের সাথে তাল মিলিয়ে তোমার স্বভাবটাও শান্তই হবে। পরে দেখলাম আমি কতো ভুল ছিলাম । সব সময়ই অশান্তির গঙ্গা জল ছেটাচ্ছো!"

"থামো এবার ! বাড়িটাতো গ্যাস গোডাউন বানিয়ে রেখেছো। ঘুনধরা টিপিক্যাল বাঙালি মানসিকতা । সব কিছুর একটাই কারণ। গ্যাস গ্যাস আর গ্যাস। মাথার যন্ত্রণা বুকের যন্ত্রণা প্রেশার বাড়া  থেকে পায়ের ব্যারাম সবার মুলে একটাই কালপ্রিট...গ্যাস। কথা না বাড়িয়ে রেডি হও বেরোতে হবে !"

গিন্নী খেপিয়াছেন ! অঃতপর ডাক্তারের চেম্বার পরবর্তী গন্তব্য ধার্য হইলো !

রিসেপসানিস্ট চপলা সুন্দরীর শ্রুতিনন্দন ডাকে আনন্দমোহন যারপরনাই আনন্দিত হয়ে পা বাড়িয়েছেন কি শান্তির পিছু ডাক...
"বলছি কি আগের রিপোর্ট গুলো এনেছো?"
"এনেছি তো ! মানে তোমার ব্যাগেই তো দিলাম "

"বলুন আনন্দ বাবু আপনার সমস্যা কি?" ডাঃ অনুরাগ বসার ইঙ্গিত করে বললেন।

"আজ্ঞে! আ..."

"তুমি থামো!"  মুখের রা কেড়ে শান্তি দেবী বলে চললেন "ডাক্তার বাবু কদিন ধরে চেস্ট পেন হচ্ছে । বেশি কাজকর্ম করলে হাঁপ লাগছে।"

"আচ্ছা ডাক্তারবাবু গ্যাস থেকে হতে পারে ?" মুখ ফসকে বলেই ফেললেন আনন্দমোহন ।

"হতে তো পারে। তবে আপনার সমস্যা শুনে মনে হচ্ছে হার্টের প্রবলেম । সুগারের ওষুধ খান? প্রেসারের কোন ওষুধ ?"
"প্রেসারের ওষুধ খান তবে অনিয়মিত। খালি বলে ওসব গ্যাসের জন্যে হচ্ছে । সুগার টেষ্ট হয়েছিলো।নরম্যাল।"  শান্তিদেবী বললেন।

এক্সামিনেশান টেবিলে উঠতে বলে ডাঃ অনুরাগ বললেন " এ সমস্যা আপনার একার নয়। তবে কি জানেন গ্যাস অম্বলের দোদাই দিয়ে রোগ পুষে রাখলে আদতে ক্ষতি। যখন মারাত্মক কিছু হয়ে যায় তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।"
" সেডেন্টারি লাইফ স্টাইল আর ফুড হ্যাবিট আমাদের রোগের মূল। তার সাথে ধূমপান মদ্যপান অতিরিক্ত চা কফি। মানসিক চাপ। কাজের চাপ । ঘুমে ব্যাঘাত। সব কিছুই অ্যাডেড রিস্ক।"
খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে প্রেসক্রিপশান প্যাডে খসখস করে লিখতে লিখতে বললেন কিছু টেস্ট লিখে দিলাম আর কিছু মেডিসিন । রেগুলার নিন। টেস্ট হলে একবার দেখিয়ে যাবেন।"

ডাক্তারের কাছ থেকে বিদায় তো নিলেন। তবে চাপা মামুলি অম্ল যে ভোল বদলে হার্টের অসুখের রূপ নেবে এটা ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি আনন্দমোহন । শান্তিদেবী চোখ মুছছেন অনেকক্ষণ ধরে। আনন্দমোহন মনে মনে গীতা ছুঁয়ে শপথ নিয়েছেন "আর যাহা ভাবিব তাহা ভাবিব। কোন রোগকেই গ্যাস বলিয়া উপেক্ষা করিব না। গ্যাস দিবো না । গ্যাস খাইবো না। এই আমি কান মুলিলাম নাকে খত দিলাম!"


No comments:

Post a Comment