সেমিকোলনে দাঁড়িয়ে আছে জিরাফ
প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে । এরকমই হওয়ার কথা । লেপের ভিতর কয়েকটা শূন্যতাকে আমি উন্মাদ করে দিয়েছি । কোথাও চোখের পানি ফেলার জায়গা নেই আর্যসভ্যতা থেকে ঘাম মুছতে মুছতে জীবনের কোলাহল অনিবার্যতার দিকে । কী এমন করতে পারি , কী ই বা করা যাবে । পরাবাস্তবতার দুপুরে কেউ কথা বলেনি আমার সাথে , কাউকে ই জিজ্ঞাসা করা হয়নি - শুধু অস্থির এক দোলাচল বুকের পাঁজরে ধাক্কা দিচ্ছিল। জানি অতিরিক্ত ক্ষরণের শেষে কোন দিকে চাঁদ উঠতে পারে সেরকম সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছি । ভাবনারা অবিন্যস্ত , স্রোত আমাকে চেনে না । ফলে নিজস্ব অনুভূতিগুলো আরো কিছু ঘনিষ্ঠতা চাইতে পারে - অনুভবে কাপড় টাঙাচ্ছিলাম তারে।সর্বক্ষণ বাঁচতে চেয়ে সন্ধ্যার কার্নিসে যারা যারা চোখ বন্ধ রেখেছিল - পূর্ব থেকে পশ্চিমে তারা ছিল মেঘ। স্মৃতি আমার ভালোবাসার দাসত্ব খুঁজছিল ; ঠিক ই তো কাকেই বুঝিয়ে বলি - কেউ তো বোঝে না ।
আমাদের অন্ধকার বোঝেনি কেউ, আমাদের আলো বোঝেনি কেউ, আমাদের কুয়াশা ছিল মনের মতো ।তাই বুঝি সন্ধ্যার মধ্যবর্তী পলাশের রঙ আঙুলের ঘনত্ব মেপে দেখতে চায় - আমি অভিমানের সকালে দ্বিতীয়বার আত্মহত্যা করতে পারি কিনা । এসো বন্ধু হাত সরিয়ে নিও না । জানি ভাবের এই ইঙ্গিতগুলো আমার জন্য উত্কর্ষ নয় । দেখো একদিন তোমাদের ঠিক এক্সরশ্মি উপহার দেব । কবিতা বলে যত উত্পীড়ন সহ্য করেছো , তেমন তো নয় হৃদয়ের দাগ । তাহলে বাদ দাও । জীবন তোমাকে বাঁচতে দেবে না ; চতুষ্পদী প্রাণীদের কোলাহল দেখে ঠিক বিপরীত অন্ধত্বে আমি নিরূপণ করতে থাকি এমনই কী ছিল চিত্কার ।
তার দেখা পাইনি - সে ও অন্ধ ছিল না আমাকে ঘুমের পরিবর্তে স্বপ্ন দিয়েছিল । আমি অভ্যাস করছিলাম ঠিক কতটা খারাপ থাকতে হলে, কতটা ভালো থাকা যায় । অথবা ভালো থাকা যাবে না এমন ভেবেই শুধরে নেওয়া । বিকেল ক্ষয়েছে । কবেকার চেনা বাতাসের সুগন্ধ গদ্যের মতো উড়ে আসছে - যখন মুক্তির কথা ভাবছিলাম তখন চিন্তা ছিল দ্বিধাগ্রস্ত । আজ কেন এত মোচড় - আগন্তুকের পায়ের ছাপ।
তুমি বাজনা বাজাও বিষাদের । আমি বসে থাকি গাছের নীচে । চেনা মুখ যদি অচেনা হয়ে যায় - বন্ধু, নাম ধরে ডেকো ।
এইভাবে কথার দিকে ফিরে যাচ্ছি । পাখি ডাকছে - ওহ্
- - কেমন আছো বন্ধু
- - মন ভালো নাই
- অতীন্দ্রিয় বালকের মতো ওপারের দৃষ্টিতে যদি চেয়ে থাকো , তবেই দেখতে পাবে
- কী দেখতে পাবো
- মন ভালো করার মতো কিছু
পাখি আপন মনে গান গেয়ে যায়
" কই ও বন্ধু কাজল ভ্রমরা রে
কোনদিন আসিবে বন্ধু কইয়া যাও কইয়া যাও রে "
- এ দিকে এসো না পথিক
এ দিকে অনেক ব্যথা
মন যদি শূন্য তোমার
কেন তবে নীরবতা -
আন্তঃরাজ্যে ডেকেছি । শব্দ হচ্ছে বিপবিপ । সমাধানের সমদূরত্বে কোনো এক উটপাখী ধর্না দিয়ে ছিল, সেই থেকে আমার মন , মনের বাইরের উচাটন। শস্যধারার প্রান্তে তোমাকে কী নামে ডাকব । আকাশ জরিমানা করে । বাতাসের গুপ্ত গুহায় জীবন খুব সংকীর্ণ ছিল না । বাইশন এঁকেছি , উন্মুক্ত শিরায় ওড়াউড়ি করছে মাছি । যা ছিল আমার শব্দ ভ্রমণ, সেখানেই রয়ে গেছে নিরাভরণ । আর্তনাদ শুনে শুনে আলোরা কাঁপছে । অপরিণামদর্শী ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়লে কোথা থেকে শুরু হবে নাস্তানাবুদ ।
- - শুনতে পাচ্ছো ? এদিকে কান পাতো । শব্দের ময়ূরাক্ষী নদীতে কীরকম নিস্তব্ধতার স্রোত । মন রাখো বেদনার স্মৃতিতে । আহা যেন ডাসা পেয়ারা । সব উদব্যস্ততা নিয়ে পালায় ওই পাখির দল । - - কী সব যা তা বলছ
- যা তা নয় গো। সব ঠিক । অভাবী চাঁদ এসে ধুয়ে দেবে মন , এমন অনুসন্ধান নেই । বসে থাকো গাছের নীচে জন্মান্তরবাদের প্রতীক্ষায় । গাছ শুধু ভালবাসা দেয় । বিনিময় চায় না কিছু ।
- - নদীতে বান ডাকলে কেউ চিনল না আমাকে । পরিচয়ের সংক্ষিপ্ত আকার নদীর জলে দিলাম ভাসিয়ে ।
- - সেই ভালো সেই ভালো । আগন্তুক চিনিয়ে দাও মনের কথা , তোমাদের মানুষের ভাষা । এসো আর ইকটু শীতল হও । যতটা দিয়েছো ততটা ফিরে পাবে না কখনও । দেবতারা ফিরে গেছে । ভগবান নিশ্চুপ ।
অবিরাম স্রোতে চতুর্দিক ভাঙছে পাড়। সময় সেমিকোলনে দাঁড়িয়ে আছে জিরাফ । মন অস্থির; যন্ত্রণার জন্য আজ কোনো তাপমাত্রা ধারণ করব না । আর যত দুঃখ নিরূপণ করে গেছো সেখানেই থাক ভালবাসার ধন । শেষ হবে না জেনেছি অনুনয় হিসেব উচ্চারণের ঢাকনা খোলা
No comments:
Post a Comment