চলে গেলেন রবিশংকর বল , বিকাশ কুমার সরকার, সুপ্রভাত রায় , মণীন্দ্র গুপ্ত । এঁদের চলে যাওয়া আমাদের তথা বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি । দুই ইন্দ্রপতন । দুই সম্ভাবনার অঙ্কুর বিদায় । তবুও আমরা বাঁক নিয়ে চলছি হৃদয় ভারাক্রান্ত হলেও । আবছা অন্ধকারে আলো জ্বালি আবার। শান্তি কামনা করি এঁদের বিদেহী আত্মার । ঈশ্বর মহান।
জিরো বাউন্ডারি ছোট ছোট পায়ে হাঁটছে । তিন সংখ্যায় পড়ল। আমাদের প্রতিযোগিতা নেই, পরাক্রম নেই ; একটু আনন্দ হয়তো আছে । একটু আনন্দের জন্য ই চলা। সঙ্গে আমাদের কিছু কথা আমরা বলি। অহংকারের মূলে উইপোকা থাকে বলে আমরা তা পরিহার করি।কারণ যে দর্শনে বিশ্বাসী হয়ে আমাদের চলা শুরু সেখানে অহংকার ছেঁটে বাদ দেওয়া হয়েছে।এবং প্রতিযোগিতা ও । সাহিত্যে প্রথম হওয়ার দৌড় কিছু নেই , হয় না । পুরস্কার বা সম্মান এগুলো একটু উত্সাহ দেওয়া বা কিছুটা স্বীকৃতি । কোথাও ঢিল না ছুঁড়ে বা পাটকেল না মেরে নিজেদের কথা বলি , নিজেদের মতো চলি । ছোট থেকেই শুরু হয় বড়ো হওয়া ।
তবে জিরো বাউন্ডারি আসার আগে বাংলা কবিতার যা দশা দিশা ছিল , জিবাক আসার পরে তা বেশ পাল্টেছে । হিমঘরে ঘুমিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রকল্প পুনরায় জেগে উঠেছে । এটা বেশ ভালো লক্ষ্মণ ।বিভিন্ন ব্যক্তিকবি বা গ্রুপ মুক্তির মর্ম বুঝতে পেরে নতুন উদ্যমে শুরু করেছে এবং জিরো বাউন্ডারিকে অনর্থক প্রতিযোগী ভেবে নিয়ে । আমরা নজরদারিতে বিশ্বাসী নই , পর্যবক্ষেণে আছি। তবু বাংলা কবিতায় জিরো বাউন্ডারি নতুন করে উন্মাদনা আনতে পেরেছে সরাসরি বা পরোক্ষে এটা কম তো নয়।
জিবাক কবিতার বহুধর্মীতার কথা বলে , আবার কবিতার অন্তর্বর্তী বহুরৈখিকতা বা মুক্তগামীতার কথা বলে। কেন্দ্রের কথা বলে আবার প্রান্তিকের কথা বলে।আবার সব বাধা সীমানা ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে । কবিতা এগিয়ে যাবেই । তরুণ কবিদের আমরা বুকে টেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত । তাদের ঘিলুতে তৈরি হোক হৃদয়ের পরিকল্পনা ।
কবিতা অসৎ এ নেই , খারাপ এ নেই , আন্দোলনে নেই এবং experiment এ ও থাকে না যখন তা লিখিত রূপ পায়। তার আগে পর্যন্ত কবিতার অনেক কিছু থাকতে পারে অদৃশ্য বৈভবে, যা আকার বা প্রতিকৃতপ্রাপ্তি হয় না । মানুষ মনে মনে যা ইচ্ছা কল্পনা করতে পারে । ভালো মন্দ কু সু যা কিছু । কিন্তু বাস্তবে রূপ দেওয়া না হলে তা গ্রাহ্য নয় বা বিবেচিত হয় না । এটাই রীতি । কিন্তু ভালো চিন্তা ভালোর দিকে ফেলতে থাকে। কদর্য চিন্তা কুৎসিত দিকে ঠেলতে থাকে । কিন্তু প্রতিফলন ই বিচার্য । তাই একটি কবিতা লিখিত রূপ পাওয়ার আগে পর্যন্ত এগুলো বিচার্য হতে পারে কিন্তু লিখিত রূপ পেলে তা কবিতা হয় । কবিতার বিভিন্ন প্রকার ভেদ থাকতে পারে, নাম থাকতে পারে, গুণগত ও বিষয়গত ধর্ম থাকতে পারে । কিন্তু কবিতা নিজে না চুরি করে, খুন করে, ধর্ষণ করে । তবে কবিতা আমাদের সু কৃতিতে সুড়সুড়ি দেয় , ভাবুক করে, প্রাণিত করে । এ সব ই ভালো, ভালোর দিকে ।
পৃথিবীর বা প্রকৃতির নিজস্ব একটি ধর্ম আছে ; সেই ধর্ম বা প্রক্রিয়া সামনে রেখে সে বিস্তারিত অবস্থায়িত। তা হল জিরো বাউন্ডারি ধর্ম। সে সামগ্রিকতাকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় । কোনো কৃষি ভূখণ্ডে দাঁড়ালে আমরা যদি তাকিয়ে দেখি , দেখতে পাবো সবুজ প্রান্তর কেমন দিগন্তের দিকে চলে গেছে । সমস্ত ফসল এক হয়ে দাঁড়িয়ে ব্যক্তি মালিকানার ছোট ছোট আলগুলোকে ঢেকে দিয়েছে এবং সমস্ত ভূখণ্ড তো এক। শুধু ব্যক্তি মালিকানার স্বার্থে তা ভাগ করা বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে । কিন্তু এগুলো সেভাবে বাউন্ডারি নয় যা মানুষের যাত্রাকে রুখে দিতে পারে । এই ধারণা বা দৃশ্য প্রায় সর্বক্ষেত্রেই। তাই universe জিরো বাউন্ডারি দর্শনে অধিষ্ঠিত । আমাদের জানার অজান্তেই এটা নির্ণিয়মান। তাই জিরো বাউন্ডারি দর্শনে কোনো কিছুকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা প্রতিযোগী মনে করে না । কিন্তু সবকিছুকে গ্রাস করতে পারে । যদি ধর্মে বাউন্ডারি না থাকে , যদি সীমান্তে বাউন্ডারি না থাকে, তাহলে তো শান্তি শান্তি । এবং পৃথিবী ইহাই চায়। মানুষ বা রাষ্ট্রনায়করা তা হতে দেয় না । জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট সেই জায়গায় ধাক্কা দিতে চায়।
কবিতার প্রকৃত রূপরেখাকে ধরতে জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট । তরুণ কবিদের পথ দেখানোর জন্য সামগ্রিকতাকে নিয়ে । যাঁরা খণ্ডে খণ্ডে ছিল তাদের বাউন্ডারি আর থাকবে না ।
এই সংখ্যার কবিতাগুলো পড়ে পাঠক আরাম পাবেন এটুকু বলতে পারি। আমরা মগজে চিন্তাসূত্রের অনুঘটক হতে পারি। হাতুড়ি মারতে পারব না । এই সংখ্যায় থাকছে জিরো বাউন্ডারি গদ্য এবং এই সময়ের উল্লেখযোগ্য কবি কুমারেশ তেওয়ারীর সাক্ষাৎকার। সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন আর এক উল্লেখযোগ্য তরুণ কবি সুকান্ত ঘোষাল ।
সবাই ভালো থাকুন , কবিতা লিখুন এবং ভাবুন।
No comments:
Post a Comment